মৃত্যু এবং পুনরুত্থান

মৃত্যু এবং পুনরুত্থান – আমরা জীব হিসেবে জন্মেছি বিধায় আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। আমরা মানুষ হই কিংবা অন্য কোনো প্রাণী হই, আমাদের মৃত্যু অবশ্যই হবে।

কারণ, প্রত্যেকটি জীব একটি সময় পর মৃত্যুবরণ করে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য মৃত্যুকে কবে নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা আমাদের জানা নেই।

এটা এমন একটি জিনিষ, যে বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ বান্দাকে দান করেন নি। সুতরাং মৃত্যুর পরে আমাদের যে একটা জীবন আছে,

যেটাকে আমরা পুনরুত্থান বা কেয়ামত দিবস বলি। সেই জিনিষটার জন্য আমরা কে কতুটুকু প্রস্তুতি নিয়েছি? আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ১৬৫ নং আয়াতে বলেন,

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ

প্রত্যেক প্রাণী  ‍মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।

কুরআনের কথানুযায়ী, সে যেই প্রাণীই হোক না কেন। মৃত্যুর পরের আরেকটি জীবনকে বলা হয়, পূনরুত্থান।

সে সম্পর্কে আল্লাহ সূরা হজের ৫ নং আয়াতে বলেন,

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّنَ الۡبَعۡثِ فَاِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَۃٍ ثُمَّ مِنۡ مُّضۡغَۃٍ مُّخَلَّقَۃٍ وَّ غَیۡرِ مُخَلَّقَۃٍ لِّنُبَیِّنَ لَکُمۡ ؕ وَ نُقِرُّ فِی الۡاَرۡحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ثُمَّ نُخۡرِجُکُمۡ طِفۡلًا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوۡۤا اَشُدَّکُمۡ ۚ وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّتَوَفّٰی وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّرَدُّ اِلٰۤی اَرۡذَلِ الۡعُمُرِ لِکَیۡلَا یَعۡلَمَ مِنۡۢ بَعۡدِ عِلۡمٍ شَیۡئًا ؕ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ هَامِدَۃً فَاِذَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡهَا الۡمَآءَ اهۡتَزَّتۡ وَ رَبَتۡ وَ اَنۡۢبَتَتۡ مِنۡ کُلِّ زَوۡجٍۭ بَهِیۡجٍ

হে মানুষ! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দেহে থাক তবে নিশ্চয়ই জেনে রেখো, আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর শুক্র থেকে, তারপর আলাকা* থেকে, তারপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট অথবা অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে। তোমাদের নিকট বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করার নিমিত্তে। আর আমি যা ইচ্ছা করি তা একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত মাতৃগর্ভে অবস্থিত রাখি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা যৌবনে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু দেয়া হয় এ বয়সেই, আবার কাউকে কাউকে ফিরিয়ে নেয়া হয় হীনতম বয়সে, যাতে সে জ্ঞান লাভের পরও কিছু না জানে। তুমি যমীনকে দেখতে পাও শুষ্কাবস্থায়, অতঃপর যখনই আমি তাতে পানি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত করে সকল প্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ।

* علق মানে যুক্ত ও ঝুলন্ত বস্ত্ত। পূর্ববর্তী তাফসীরকারকদের অনেকে এর অর্থ করেছেন রক্তপিন্ড। তবে আধুনিক জীববিজ্ঞানীদের মতে, পুরুষের শুক্র ও নারীর ডিম্বানু মিলিত হয়ে মাতৃগর্ভে যে ভ্রূণের সৃষ্টি হয় তা পরে জরায়ূ গাত্রে সংযুক্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য ‘আলাকা শব্দের অনুবাদ এখন করা হয়, এমন কিছু যা যুক্ত হয়ে থাকে।

এই যে আল্লাহ তা’আলা একটি ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছেন, আমাদেরকে কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। সর্বপ্রথম শুক্রানু থেকে।

তারপর আলাকা তথা এমন স্থানে রেখেছেন যা যুক্ত থাকে। তারপর মাংসপিন্ড থেকে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে আমাদেরকে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্টি করেছেন, এরপর আমাদের কি হবে?

2

আমরা পূর্ণাঙ্গ মানুষ তথা জীব হয়ে মায়ের গর্ভ থেকে দুনিয়াতে আসবো।

এরপর কিছুদিন জীবিত থাকার পর যখন এই পৃথিবী থেকে চলে যাব, এর মাধ্যমেই কি জীবন শেষ?

এর পরে কি আমাদের কোনো কিছু হবে না? এমনটা ভাবা ভুল। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদত ও একত্ববাদ বর্ণনার জন্য।

আমরা যদি আল্লাহর এই একত্ববাদকে অস্বীকার করি, আল্লাহর ইবাদত না করি এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ না মানি,

তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আমদেরকে কঠিন শাস্তি দিবেন।

আল্লাহ বলেন, তোমরা নামাজের পরে রিযিকের জন্য বের হয়ে যাও। কোনো সমস্যা নাই।

আমরা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, তাহলে মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবন সফল।

যদি আমরা ব্যবসার পেছনে পড়ে বা কাজের পেছনে পড়ে নামাজ ছেড়ে দেই, আর তা পরবর্তীতে আদায় না করি,

তাহলে প্রতিটি নামাজের জন্য আমাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।

জাহান্নামের শাস্তি কোনো সাধারণ বিষয় নয়। সেটা হলো এমন একটি বিষয়, যা কখনো কোনো বান্দা কল্পনাও করে নি।

আল্লাহ তা’আলা মানুষের কল্পনার একটা সীমা দিয়েছেন। সাধারণত অনেক সায়েন্টিস্ট বা ডক্টর বলে থাকে, কল্পনার কোনো সীমা নেই।

এটি ভুল কথা। কারণ, কল্পনারও একটা সীমা আছে। উদাহরণস্বরুপ যদি আপনি আজ থেকে এক হাজার বছর আগে চলে যান তাহলে দেখুন,

সেকালের মানুষ কিন্তু কখনো কল্পনাই করে নি যে, আমাদের হাতে একটা স্মার্ট ফোন থাকবে।

এমনকি এখন তো আমাদের নিকট কম্পিউটার আছে।

ক্যামেরা আছে। গাড়ি আছে। বড় বড় ইঞ্জিনচালিত জাহাজ আছে। বিদ্যুৎ আছে। ইন্টারনেট আছে। ১০০০ বছর আগের কোনো মানুষ তো এসবের কল্পনাও করে নি।

যদি কল্পনা অসীম হতো, তাহলে সে অবশ্যই এসবের কল্পনা করতে পারতো। কিন্তু তা হয় নি।

সুতরাং জাহান্নামের আযাব কেমন হবে, তা কখনো মানুষের মস্তিষ্কে আসবে না।

3

প্রিয় ভাই! নামাজের পরে আপনি রিযিকের সন্ধানে বের হবেন, তাতে কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে অবশ্যই আদায় করবেন।

মৃত্যু এবং পুনরুত্থান আমার ও আপনার, সকলেরই হবে। মৃত্যুর পরবর্তী জিন্দেগীটা এমন একটি জিন্দেগী, তখন কেউ কাউকে সাহায্য করবে না।

আপনার যত কাছের বন্ধুই দুনিয়াতে থাকুক না কেন, মৃত্যুর পর কেউ আপনাকে সাহায্য করবে না।

আপনার আমল দ্বারাই পরকালে আপনাকে পার হতে হবে।

সুতরাং আশা করি, আজকের পর থেকে আমরা কেউ কখনো নামাজ ছাড়বো না।

আমরা যদি ক্ষেত্রবিশেষে জামাতে আদায় করতে না পরি, তাহলে একাকাী নামাজ আদায় করে নিব।

তবে রাসূল সা. এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, জামাত ছাড়া যদি কেউ নামাজ পড়ে তাহলে এর জন্য তার একটা গুনাহ হয়।

কারণ, জামাতে নামাজ আদয় করার তার সামর্থ্য ছিল, কিন্তু এরপরও সে জামাতে নামাজ আদায় করে নি। সূরা যারিয়াতের ৭-৮ নং আয়াতে বলা হচ্ছে,

فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَهٗ

কেউ অণু পরিমাণ ভালকাজ করলে তা সে দেখবে,

وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ شَرًّا یَّرَهٗ

আর কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখবে।

Scroll to Top